প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস

image-not-found

বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটঃ
সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের একটি বঞ্চিত এলাকা ছিল আহমেদনগর। এলাকায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। ওয়াজেদ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯২ সালে জনাব মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম (ইংল্যান্ড প্রবাসী) এবং তার পরিবারের আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ফলে আহমেদনগর গ্রাম ও আশপাশের এলাকার শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা লাভের সুযোগ পায়। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য ওই এলাকায় অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকায় শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে হয় ৪ কিলোমিটার দূরবর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু এলাকার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে দূরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পুরুষ শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারলেও মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। ফলে মেয়ে শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে। এমন বাস্তবতায়, জনাব মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম ২০০৮ সালে আহমেদ নগরে জয়বুননেছা গার্লস হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন যাতে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করা এবং নারী শিক্ষার প্রচার করা হয়।
সাফল্য:
বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর থেকে ছাত্রীদের ঝরে পড়া রোধ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করছে। অনেক শিক্ষার্থী পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সরকারি বৃত্তি অর্জন করে বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। কিছু শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে পড়াশোনা শেষ করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে।

প্রতিষ্ঠাতার বক্তব্য

image-not-found

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম,

জয়বুননেছা গার্লস হাই স্কুলের স্মার্ট ডায়নামিক ওয়েবসাইট তৈরী হয়েছে জানতে পেরে সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ তা'লার দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। বিদ্যালয়টি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর হতে শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, অভিভাবকদের আন্তরিক প্রচেষ্ঠা ও এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় এ পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে অনগ্রসর পরিবারগুলোর নারী শিক্ষা বিস্তারে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
কৈশোর কাল থেকেই এলাকার শিক্ষা দীক্ষার উন্নয়নে মনের মধ্যে স্বপ্ন ছিল । আমার কৈশোরকালে অত্র এলাকার নিজ কুরুয়াতে শ্রী ফনিন্দ্রনাথ চৌধুরীর (বেনা বাবু) বাড়ির আঙ্গিনায় মেয়ে শিশুদের জন্য একটি পাঠশালা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারনে ষাটের দশকে পাঠশালাটি বন্ধ হয়ে যায় । যা আমার মনে গভীর দাগ কাটে। তখনই আমার বাড়ির আঙ্গিনায় মেয়ে শিশুদের জন্য একটি পাঠশালা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু সে সময় উন্নত জীবনের সন্ধানে বিলেতে চলে আসায় তা আর সম্ভব পর হয়ে ওঠেনি। দীর্ঘদিন যাবত বিলেতে স্থায়ীভাবে বসবাস করলে মন ও আত্না পড়ে ছিল নিজ জন্মস্থানে । যদি ও আমার সন্তানেরা বিলেতে নামীদামী প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ণ করে কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ ব্যারিষ্টার, কেউ ব্যাংকার ও কবি সাহিত্যিক হিসেবে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত এবং আমার পরিবারের অন্যান্য ভাইবোনদের সন্তানেরা ও দেশে এবং বিদেশে নামীদামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ণ করে চিকিৎসক, আইনজীবি ও ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তারপর ও শিক্ষাক্ষেত্রে অনগ্রসর নিজ এলাকার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে থাকে। তাই শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে পরিবারের ভাইবোনদের সহযোগিতা ও উৎসাহে প্রথমে বাবার নামে ১৯৯২ সালে আহমদ নগর ওয়াজিদ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয় (যা ২০১৪ সালে জাতীয়করণ করা হয়েছে) ও ২০০৮ সালে মায়ের নামে “জয়বুননেছা গার্লস হাই স্কুল” প্রতিষ্ঠা করেছি।
বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর হতে প্রতিনিয়ত শিক্ষার সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি ও মানোন্নয়নে প্রচেষ্ঠা অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যেই বিদ্যালয়টি নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের স্বীকৃতি ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের সরকারি অনুমোদন লাভ করেছে। বিদ্যালয়টিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ বিজ্ঞানাগার স্থাপন ও কম্পিউটার ব্যবহারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিকে কলেজে উন্নীত করার প্রচেষ্ঠা অব্যাহত আছে। এই সব সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে অত্র এলাকার জনসাধারণ তাদের মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে সার্বিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রদান করে সমাজ ও জাতি গঠনে এগিয়ে আসলে আমার এই প্রয়াস স্বার্থক হবে বলে আশা করছি।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলের সহায় হোন। আমীন।

মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম
প্রতিষ্ঠাতা
জয়বুননেছা গার্লস হাই স্কুল ।

সভাপতির বাণী

image-not-found

আস্‌সালামু আলাইকুম,

মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর অন্যতম হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষা সমাজ তথা দেশ গড়ার প্রধান হাতিয়ার। বিশেষভাবে বলতে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে চিন্তাশক্তির সম্পূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে জীবনকে আরও সুসংহত, সমৃদ্ধ ও যুগোপযোগী করা যায়।
সুন্দর ও সুস্থ সমাজ গঠন, সর্বোপরি দেশ ও জাতির উন্নতি ও কল্যাণের জন্য পুরুষের পাশাপাশি প্রয়োজন নারী শিক্ষার, নারী আমাদের সমাজের বড় অংশ। নারী শিক্ষা ব্যতীত কোন সমাজ তথা দেশের উন্নতি সম্ভব নয়, একজন শিক্ষিত নারী তার পরিবারের জন্য গর্ব, সমাজের জন্য অলংকার, আর দেশের জন্য অমূল্য সম্পদ। নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে বীর নেপোলিয়ন বলেছিলেন, “আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদেরকে একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।”
তাই এই মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে নারীর অগ্রযাত্রাকে সুসংহত করার প্রয়াসে জাতি গঠনের অন্যতম দাবীদার নারী শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে ২০০৮ সালে ওসমানী নগর উপজেলার আহমদ নগর গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয় “জয়বুননেছা গার্লস হাই স্কুল”, গ্রামীণ পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে সমাজের সেইসব সুবিধা বঞ্চিত মেয়েদের জন্য শিক্ষা সুনিশ্চিত করা, যারা পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন সামাজিক বা অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে তাদের লক্ষ্য পূরণে অক্ষম। এইসব সুবিধা বঞ্চিত মেয়েদের অক্ষমতা দূর করে তাদেরকে আধুনিক শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে জন্মলগ্ন থেকে অদম্য উদ্যমে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান ।
সম্পূর্ণ অবৈতনিক, যুগোপযোগী শিক্ষার উপকরণ ও আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির কারণে গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও শহরের বিভিন্ন নামীদামী প্রতিষ্ঠানের সাথে তাল মিলিয়ে এগুতে সক্ষম এই প্রতিষ্ঠান।
এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে ভালো ফলাফল অর্জন করছে। তাদের ভালো ফলাফলের জন্য আজ এই প্রতিষ্ঠান ওসমানীনগর উপজেলার একটি অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আলোচিত ও সমাদৃত ।
পড়াশোনার পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানে রয়েছে সহশিক্ষা কার্যক্রম (যেমন কম্পিউটার শিক্ষা, কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, শরীরচর্চা ও বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা) যাতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদের মেধার সম্পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারছে।

অধ্যাপক ডাঃ এম. আজির উদ্দিন আহমদ
সভাপতি
জয়বুননেছা গার্লস হাই স্কুল ।